প্রকাশিত : 09-01-2025 || প্রিন্ট এর তারিখঃ Jan 10, 2025

ঠাকুরগাঁওয়ে নিজের জমি বিক্রি করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে তালগাছ রোপণ

রুবেল রানা,জেলা করেসপন্ডেন্ট,দৈনিক প্রথম সকাল। শীতের তীব্রতায় যখন অনেকে ঘরে বসে উষ্ণ আবহে থাকেন,তখনো হিমেল হাওয়ার মধ্যে রাস্তার পাশে তালগাছের পরিচর্যা করতে দেখা যায় ৭১ বছর বয়সী খোর‌শেদ আলীকে।শুধু শীত নয়,গ্রীষ্মের অসহনীয় গরম কিংবা বর্ষাকা‌লের প্রবল বৃষ্টিতেও একই কাজ করেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এভাবেই প্রতিদিন ভো‌রে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ একটি মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তারপর গা‌ছের প‌রিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার ক‌রেন বৃক্ষপ্রেমী খোর‌শেদ আলী।খোঁজ নি‌য়ে জানা যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৭নংচিলারং ইউনিয়নের  পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের বা‌সিন্দা খোরশেদ আলী।পেশায় পল্লিচিকিৎসক। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ১ লাখ তালগাছ রোপণের প্রতিজ্ঞা করেন তিনি।সম্প্রতি তাঁর গা‌ছ রোপণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজা‌রে।নিজের জমি বিক্রি করে সে টাকায় রাস্তার ধারে লাগি‌য়ে‌ছেন এসব গাছ।তাঁর এ কর্মকাণ্ড দে‌খে এলাকাবাসী একসময় মানুষটিকে "পাগল" ভাবলেও এখন তাঁকে নিয়ে করেন গর্ব।২০১৪ ইং সাল থেকে রাস্তার ধারে চারা রোপণ করে আসছেন খোর‌শেদ। নিজের গ্রাম,ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা ছাড়িয়ে পাশের বা‌লিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার ধারে তিনি তালগাছ লাগিয়েছেন।শুধু তালগাছই নয়,ফলদ,বনজ ও ঔষধি গাছের চারাও রোপণ করেছেন।এত গাছ থাকতে তালগাছ লাগানো কেন শুরু করলেন, জানতে চাইলে খোর‌শেদ আলী ব‌লেন মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে তি‌নি তালগাছ রোপ‌ণের কাজটি করছেন।তিনি মনে করেন তালগাছগুলো একদিকে পরিবেশ বাঁচাবে এবং বজ্রপাত ঠেকাতে সহায়তা করবে। অন্যদিকে এই গাছ দেখলে মানুষের শহীদদের কথা মনে পড়বে।খোর‌শেদ বলেন তালগাছ ছিল না বলে এত বছর ধরে এলাকায় বাবুই পাখির খুব একটা দেখা মিলত না। এখন সেই পাখিরা আবার ফিরছে।তা দেখে মন ভরে যায়।সাত ছেলে-মেয়ে ও দুই স্ত্রীকে নিয়ে খোর‌শে‌দের সংসার।বৃক্ষপ্রেমী মানুষ হলেও পল্লিচি‌কিৎসা ও কৃ‌ষিকা‌জে জীবিকার পুরো ব্যবস্থা না হওয়ায় বাড়তি আয়ের জন্য তি‌নি এক‌টি মস‌জি‌দে ইমাম‌তি করেন। অভাব-অনটনের মধ্যেও ১ লাখ ১০ হাজার তা‌লের চারা রোপণ ক‌রেন তি‌নি।খোর‌শেদ আ‌লীর বড় ছে‌লে মোজা‌ম্মেল ইসলাম ব‌লেন জ‌মি বি‌ক্রি ক‌রে বাবা তালগাছ লাগা‌তেন। প্রথ‌মে বাধা দি‌লেও এখন ভা‌লো লা‌গে।রেল ঘুন্টি এলাকার একা‌ধিক ব্যক্তি জানান খোর‌শেদ আলীকে এখন সবাই বৃক্ষ‌প্রেমী নামে চেনেন।তিনি নিজ উদ্যোগে যে তালগাছ রোপণ করছেন,এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।একটা সময় তিনি থাকবেন না,কিন্তু এই তালগাছের সুফল পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে।৭নং চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শোভা আলী ব‌লেন খোর‌শেদ আলীকে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে তালগাছের চারা লাগাতে দেখে আসছি।তাঁর বাড়ির অবস্থা বা আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না।তবু তাঁর যে আয় হয়,তা দিয়েই তিনি সাংসারিক খরচ চালিয়ে বাকি টাকা বৃক্ষ রোপণে ব্যয় করেন। এ যুগে তাঁর মতো সাদামনের মানুষ বিরল।অভাবে থাকা এই মানুষটা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভালো হতো।এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত‌রের উপপ‌রিচালক সিরাজুল ইসলাম ব‌লেন পরিবেশের পরম বন্ধু তালগাছ। ভূমিক্ষয়, ভূমিধস যেমন রক্ষা করে তেমনি বাড়ায় ভূগর্ভস্থ পানির মজুত ও মাটির উর্বরতা শক্তি। তালগাছের কারণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা,ঘটে বৃষ্টিপাত।বজ্রপাত থেকে রক্ষা করতে তালগাছের উপকারিতা তো সবার জানা।কৃ‌ষি বিভাগ থে‌কে খোর‌শেদ আলী‌কে বিভিন্নভাবে উৎসাহ, পরামর্শ দেওয়া হ‌চ্ছে।