প্রকাশিত : 17-08-2024 || প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 23, 2024

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি হারানো মবিন সুস্থভাবে বাঁচতে চায়

বিশেষ প্রতিনিধি,শরীয়তপুর। রাজধানীর উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতো শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধলকুড়া গ্রামের মবিন (১৭)।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেয় সে।মিছিলটি কতদূর যাওয়ার পরই পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টি শক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারায় মবিন।পিতৃহারা মবিনের চিকিৎসা করতে গিয়ে এখন নিঃস্ব তার অসহায় পরিবার।গতকাল শনিবার ১৭ ই আগস্ট সকালে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড় শিধলকুড়া গ্রামে এই কথাগুলো বলছিলেন মবিন নিজেই।পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে প্রতিবন্ধী ছেলে জুলহাসসহ তিন ছেলেকে রেখে প্রায় ৫ মাস আগে মারা যায় মবিনের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাল।এরপর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে মবিনের মা নাজমা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়লে স্থানীয় ও স্বজনদের পরামর্শে বড় ছেলে নাজমুল হুদা পলাশকে ড্রাইভারের চাকরি ও মবিনকে ঢাকার উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে দেন।খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে চলছিল মবিনের সংসার।গত ১৮ ই জুলাই প্রতিদিনের মতো মবিন রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মীর পাশে ৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়ামের মোঃ ওয়াসিম তালুকদারের কম্পিউটারের দোকানে কাজের জন্য যায়।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে।পারিবারিক পিছুটানসহ সব কিছু ভুলে মবিন দোকান বন্ধ করে মিছিলে যোগ দেয়।এরপর মিছিলটি যখন উত্তরা থানার দিকে যায় তখন থানার ভেতর থেকে এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করে পুলিশ।এক পর্যায়ে একটি বুলেট মবিনের বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান কানের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।পাশাপাশি পুলিশের ছোড়া গুলিতে তার চোখসহ মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়।এরপর মিছিলের সাথীরা গুরুতর আহত অবস্থায় মবিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করলেও এখনো মবিনের মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। টাকার অভাবে হাসপাতালে যেতে না পারায় এখন সে বাড়িতেই অবস্থান করছে।মবিন বলেন শুনেছি সরকার এই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।আমিও দেশের প্রয়োজনে ছাত্রের জন্য মিছিলে গিয়ে ২ চোখের দৃষ্টিশক্তি ও ১ কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে বেঁচে আছি।আমার পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা করে আমাকে সুস্থ করা সম্ভব না।আমার চোখের দৃষ্টিসহ কানেরশ্রবণ শক্তি ফিরে পেতে সরকার,আন্দোলনকারীসহ দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।সুস্থভাবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই।মবিনের বড় ভাই ড্রাইভার নাজমুল হুদা পলাশ বলেন ঘটনার দিন আমি বাড়িতেই ছিলাম।সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমার মোবাইলে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল আসে।জানতে চায় আমি মবিনের বড় ভাই কি না?আমি তাকে হ্যাঁ বলতেই তিনি আমাকে জানান দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চলে আসুন।আপনার ভাই মবিন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে আছে।এরপর আমি দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে মবিনকে খুঁজে পাই। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।নিজেদের সব কিছু মিলিয়ে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি আমরা ব্যয় করতে পেরেছি মবিনের চিকিৎসার পেছনে।এখন ভিটে মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার ভাই শ্রবণ শক্তিসহ দৃষ্টিশক্তি ফিরে না পেলে এক প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সাথে মবিনও পরিবারের বোঝা হয়ে যাবে। ডাক্তার বলেছেন, ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হলে ভাই আমার পুরো সুস্থ হয়ে যাবে।আমার পরিবার আন্দোলনকারী,দেশবাসী ও সরকারের কাছে সহযোগিতা চায়। আপনারা সবাই আমার ভাইটির জন্য এগিয়ে আসুন।মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন মবিনের বাবা মারা যাওয়ার সাড়ে চার মাসের মাথায় আল্লাহ আমার এ কী করলেন?আমার একটা ছেলে প্রতিবন্ধী।ঐ এক ছেলেকে নিয়েই আমার হিমশিম খেতে হয়।এখন আবার আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে।আমি দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এখন কোথায় যাব? সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।