প্রকাশিত : 06-09-2024 ||
প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 23, 2024
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,দৈনিক প্রথম সকাল। রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ২০০৯ ইং সালের ২৫ ও ২৬ শে ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ।বিডিআর সদর দপ্তরে সেদিন কী হয়েছিল এবং সরকার ও সেনাবাহিনীর কেমন ভূমিকা ছিল নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তা জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ৫ ই সেপ্টেম্বর মঈন ইউ আহমেদ তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বিডিআর সদর দপ্তরে সেদিন কী হয়েছিল এবং সরকার ও সেনাবাহিনীর কেমন ভূমিকা ছিল এসব বিষয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেন।মঈন ইউ আহমেদ বলেন বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার আমি যখন তদন্তের আদেশ দেই তখন আমাকে বলা হয় যখন সরকার এই বিষয়ে তদন্ত করছে,তখন আমাদের এর প্রয়োজনটা কী?এই তদন্ত করতে সরকারের কাছ থেকে যে সাহায্য প্রয়োজন তা আমরা পাইনি।মঈন ইউ বলেন সেদিন (২০০৯ সালের) ২৫ শে ফেব্রুয়ারি সকালে সাড়ে ৭টায় সেনাসদরের প্রতিদিনের মত কাজ শুরু হয়।সকালে আমি সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।এমন সময় সিজিএস লেফটেনেন্ট জেনারেল সিনহা আমার কাছে এসে বলেন আমাদের কাছে কিছু মর্টার আছে,যা সেনাবাহিনী ব্যবহার করে না।এর গুদামজাত এবং রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের জন্য কঠিন।বিডিআর এগুলো ব্যবহার করে।তিনি আরো বলেন এরপর আমি বিডিআরের ডিজি জেনারেল শাকিলের সাথে কথা বললে তিনি এগুলো নিতে রাজি হন।আমার বিশ্বাস তিনি তখন পর্যন্ত এই বিদ্রোহ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।এরপর আমি আর সিজিএস মিটিংয়ের জন্য যাই। ৯টায় সেই মিটিং শুরু হয়।আমারা সবাই তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ি সেখানে।সাড়ে ৯টায় তার দিকে আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কর্নেল ফিরোজ রুমে প্রবেশ করেন এবং আমাকে বলেন পিলখানায় গণ্ডগোল হচ্ছে।আপনার দিক-নির্দেশনা প্রয়োজন।কিছুক্ষণ পর আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি।কিন্তু তাদের ফোন ব্যস্ত পাই।মঈন ইউ আহমেদ বলেন সামরিক গোয়েন্দারা তখন আমাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানায়।পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আমি তখন সময় বাঁচাতে কারো নির্দেশ ছাড়া আরেকটি ব্রিগেডকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেই।তারা তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে যার নামকরণ করা হয় অপারেশন রেস্টোর অর্ডার।তিনি আরো বলেন ৯টা ৪৭ মিনিটে ডিজি বিডিআরকে ফোনে পাওয়া যায়।তিনি আমাকে জানান দরবার চলাকালীন দুইজন সশস্ত্র সৈনিক প্রবেশ করে একজন আমার পিছনে দাঁড়ায়।এরপরই বাইরে থেকে গুলির শব্দ আসে।সাথে সাথে ভেতরে থাকা সৈনিকরা দরবার হল থেকে বের হয়ে যায়।এগুলো সবই মনে হয় প্ল্যান করা এবং প্ল্যান অনুযায়ী সব চলছে।তিনি বলেন আমি সেক্টর কমান্ডার এবং ব্যাটলিয়ন কমান্ডারদেরকে পাঠিয়েছি তাদের ফেরত আনার জন্য।তখন আমি তাকে অপারেশনের কথা জানাই।মঈন ইউ আহমেদ বলেন ৯টা ৫৪ মিনিটে আমাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই।এর মধ্যেই তিনি বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়ে গেছিলেন।এ সময় আমি তাকে অপারেশনের কথা জানালে তিনি জানতে চান কতক্ষণ সময় লাগবে এই ব্রিগেডকে তৈরি করতে?আমি সময় জানিয়ে ব্রিগেডকে পিলাখানায় যাওয়ার জন্য তার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন।এক্ষেত্রে অনেক সময় লাগলেও ৪৬ ব্রিগেড ১ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রা শুরু করে।তিনি বলেন এদিকে বিদ্রোহীরা বিডিআর গেটগুলোর সামনে আক্রমণ প্রতিহত করতে রকেট লঞ্চার,মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্র মোতায়েন করে।বেলা ১১টায় ৪৬ ব্রিগেডের প্রথম গাড়িটি মেইন গেটের কাছাকাছি পৌঁছালে বিদ্রোহীরা একটি পিকআপ লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায়।এতে চালক ঘটনাস্থলেই মারা যান।লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসের ধারণা অনুযায়ী সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই ডিজি,ডিডিজি,কর্নেল আনিস,কর্নেল কায়সারসহ অনেক অফিসারকে গুলি করে হত্যা করা হয়।আমাদের টিম পৌঁছায় ১১টার পরে।ঘটনার সময়ে গণমাধ্যমে চলা লাইভ কাভারেজ বিডিআর বিদ্রোহ ছড়িয়ে দিতে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে বলে সমালোচনা করেন তিনি।সাবেক সেনাপ্রধান জানান ক্যাপ্টেন শফিক তার নেতৃত্বে ৩৫৫ জন র্যাব সদস্য নিয়ে পিলখানায় পৌঁছান ১০টার আগেই।এ সময় তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পিলখানায় প্রবেশের অনুমতি চাইলেও তিনি তা পাননি।তিনি অনুমতি পেলে হয়ত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সুবিধা হত এবং এত ক্ষয়ক্ষতি হত না।তিনি জানান ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে পিএসও এএফডি জানায় সরকার রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।বিদ্রোহীরা দাবি করেছে কোনো আলোচনার আগে সেনাবাহিনীকে এই এলাকা থেকে চলে যেতে হবে।তাদের সাথে সমঝোতা না হলে তখন সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হবে। বেলা ১২টায় তিনি আমাকে ফোন করে জরুরিভিত্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে যমুনায় দেখা করতে বলেন।বেলা ১টার দিকে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং হুইপ মির্জা আজম আলোচনার জন্য পিলখানায় যান।তিনি আরো বলেন আমি যমুনায় যাবারও ঘণ্টাখানেক পর বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান সেখানে আসেন।অর্থ্যাৎ তাদেরকে আমার পরে ফোন করে আসতে বলা হয়েছে।অনেকক্ষণ পর তারা সেখানে আসলে আমাদের জানানো হয়,সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং হুইপ মির্জা আজম বিদ্রোহীদের একটি দল নিয়ে যমুনাতে আসছে এবং তারা সাধারণ ক্ষমা চায়।সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন বিদ্রোহীদের কিছু বলার থাকলে আমরা যেন তাদের বলি।তখন আমি তাকে বলি অনেকে নিহত হয়েছেন।তাদের কোনো দাবি মানা যাবে না।আপনি তাদের বলবেন প্রথমত অফিসার হত্যা এই মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে।দ্বিতীয়ত যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সবাইকে এখনই মুক্তি দিতে হবে।তৃতীয়ত,অস্ত্রসহ বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং চতুর্থত সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার প্রশ্নই নেই।ভিডিওতে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করেন মঈন ইউ আহমেদ।এসময় বিডিয়ার বিদ্রোহ নিয়ে তার লেখা বই খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।