প্রকাশিত : 01-10-2024 ||
প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 23, 2024
পরিবাহনের টিকেট বিক্রেতা থেকে পৌর মেয়র হওয়া আবুল খায়েরের যত কান্ড
বিশেষ প্রতিবেদক,দৈনিক প্রথম সকাল। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভাটি ২০০৫ ইং সালের ১ লা সেপ্টেম্বর স্থাপিত হয়।যার আয়তন ১৯.৭৫ বর্গ কিঃমি।এই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা ৩৪,৬১১ জন।২০২১ ইং সালের ১৪ ই মার্চ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে আসেন এক সময়ে ফরিদগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াতকারী পরিবাহনের টিকেট বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহকারী ও পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী।বৃদ্ধ বয়সে পৌর মেয়র হওয়ায় পৌরসভার সকল বিষয়ে ক্ষমতার জোরে সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি।স্থানীয় সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের একমাত্র কন্যা নাজমুনন্নাহার অনির হাতে তুলে দিয়েছেন বলা চলে পৌরসভার দায়িত্ব,বাবার স্বেচ্ছাচারীতার মধ্য দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনি হয়ে উঠেন অঘোষিত মেয়র।বাবা আবুল খায়ের পাটোয়ারী ও মেয়ে নাজমুন্নাহার অনির হাতে জিম্মি ছিলেন পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দারোয়ান পর্যন্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলররা।ফরিদগঞ্জ পৌরসভার অফিসের চেকবই ছিনিয়ে নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নিতেন মেয়র কন্যা।মেয়র কন্যার জিম্মায় থাকত পৌরসভার সকল চেকবই।সময়মতো বেতন থেকে বঞ্চিত হতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারীর মেয়ে চেকবই ছিনিয়ে নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে পৌর সচিব শাহ সুফিয়ান জানান দীর্ঘদিন পৌরসভার চেকবই তার কাছে ছিল,৫ ই আগস্টের পর পৌরসভার অফিস সহকারী দীনেশের মাধ্যমে চেকবই অফিসে প্রেরণ করেন।তার ক্ষমতার সময়ে আমরা ভয়ে প্রতিবাদ তো দূরের কথা,কথাও বলতে পারিনি।পৌরসভার ৭ জন কর্মচারী নিয়োগে ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে মেয়র কন্যার বিরুদ্ধে।এছাড়া মেয়র কন্যা বাজার ও বাসস্ট্যান্ড ইজারা বাবদ হাতিয়ে নিতেন প্রতি বছর ১০ লাখের অধিক টাকা।পৌরসভার উন্নয়ন খাতে প্রকল্পের কাজে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিতেন লক্ষ লক্ষ টাকা।গোপালগঞ্জে শশুরবাড়ি থাকা সত্ত্বেও স্বামীর সাথে না থেকে মেয়র পিতার ক্ষমতায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন ফরিদগঞ্জে।জিম্মি করে রাখেন পৌরবাসীকে।পৌর ক্যাশিয়ার থেকে জানা যায় ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে ফাতেহা এন্টারপ্রাইজের নাম ব্যবহার করে কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই মেয়র কন্যা।পৌরসভার সকল ক্ষেত্রে তার অধিপত্য বিস্তার ছিল।অন্যায়,অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ছিল মেয়রকন্যার কাজ।গাড়ির টিকেট বিক্রি করে চলতে হত আবুল খায়ের পাটোয়ারীর সংসার।আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময়ে মেয়র হয়ে মেয়েকে ব্যবহার করে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়।নিজ এলাকাতেই করেন ২টি বাড়ি।আবুল খায়ের পাটোয়ারী পৌর মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার মেয়ে নাজমুনন্নাহার অনি প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার গাড়ির মালিক বনে যান।কখনো গাড়িতে সাংবাদিক,কখনো পুলিশ আবার মুক্তিযোদ্ধা লেখা স্টিকার লাগিয়ে পুলিশের হর্ন বাজিয়ে যাতায়াত করতেন নিয়মিত।বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে থাকেন।দুর্নীতি ও কালো টাকার জোরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ফরিদগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখেন মেয়র কন্যা।১৭ জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে নাজমুনন্নাহার অনি ছিলেন একজন।কিন্তু মনোনয়নথেকে হোন বঞ্চিত।গত ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে এক এক করে মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা।বর্তমানে আত্মগোপণে রয়েছেন সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী ও তার কন্যা নাজমুন্নাহার অনি।