প্রকাশিত : 13-10-2024 ||
প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 23, 2024
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে গ্রেফতারকৃ্ত ৩ আসামীকে নিয়ে যা বললেন সারজিস
বিশেষ প্রতিবেদক,দৈনিক প্রথম সকাল। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা চালিয়ে ২ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৩ জন আন্দোলনকারী নন,তারা স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।রবিবার ১৩ ই অক্টোবর রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এমনটি দাবি করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।এর আগে শনিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নোয়াখালী জেলার এসপি মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন বৃহস্পতিবার পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।গ্রেফতাররা হলেনঃ-সোনাইমুড়ী পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কৌশল্যারবাগ গ্রামের নাহিদুল ইসলাম (১৬),৩ নম্বর ওয়ার্ডের নাইম হোসেন (২১) ও জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট গ্রামের ইমাম হোসেন ইমন (২২)।তাদের গ্রেফতার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।এর পরিপ্রেক্ষিতে সারজিস আলমের এ ফেসবুক পোস্ট এলো।ফেসবুক পোস্টে যা লেখেন সারজিসঃপ্রথমেই যখন শুনলাম নোয়াখালীতে পুলিশ হত্যা মামলায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,তখনই নোয়াখালী জেলার একাধিক সমন্বয়ক, আন্দোলনকারী ও জেলা পুলিশের সাথে কথা বলি।নোয়াখালীতে প্রধান আন্দোলন হয় মাইজদীতে।সমন্বয়কদের ভাষ্য অনুযায়ী,মাইজদীতে গুলি চলেনি।যে ৫জন শহীদ হয়েছেন,তারা সোনাইমুড়ী উপজেলার এবং সেখানেই তারা শহিদ হন৷৫ ই আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেল প্রায় ৪টার দিকে সোনাইমুড়ী থেকে বিজয় মিছিল বের হয়।যারা এতদিন ধরে আন্দোলন করেন,তাদের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলনের ক্ষেত্র মাইজদীতে যাওয়া। এর মধ্যে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ সোনাইমুড়ী থানার দিকে অগ্রসর হন।ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আছেন-এ তথ্যের ভিত্তিতে থানায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ মাইক দিয়ে থানার ভেতরে না আসার জন্য ঘোষণা দেয়। কিন্তু মানুষ তারপরও থানার ভেতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করে।তখন পুলিশ গুলি ছুড়লে ৩জন গুলিবিদ্ধ হন এবং তাদের একজন ওই স্থানেই মারা যান। এরপর শুরু হয় অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি, হামলা, পাল্টা হামলা। মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।তখন জনতার মধ্য থেকে কিছু সুযোগ সন্ধানী ভিন্ন উদ্দেশ্যের লোক থানার অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করে,পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ে এবং একজন কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করে।এতে মোট ২জন পুলিশ সদস্য এবং তাদের একজন চালক নিহত হন।কিছু পথচারী,কিশোরও গুলিবিদ্ধ হয়।যে ৩ ছেলেকে গ্রেফতার করা নিয়ে কথা হচ্ছে,তাদের গ্রেফতার করার মূল কারণ,তাদের একজন সেদিনের লুট করা অবৈধ অস্ত্রসহ টিকটকে পোস্ট দেয় ভাব নেওয়ার জন্য।সেই ছবি দেখে স্থানীয় জনতাসহ অনেকেই পুলিশকে অবহিত করে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়।জিজ্ঞাসাবাদে সেই ছেলে আরও ২জনের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে।এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার বিভিন্ন এভিডেন্স (প্রমাণ) তাদের কথায় ও ফোন ম্যাসেজিংয়ে পাওয়া যায়৷ তাদের মধ্যে এক কিশোর নিহত এক পুলিশ সদস্যের মানিব্যাগ ও ফোনও নিয়ে যায়। এ পর্যন্ত নোয়াখালীতে লুট হওয়া ২৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।এসবের মধ্যে রয়েছে চায়না রাইফেল,পিস্তল,শটগান ইত্যাদি।এ নিয়ে জনমানুষের মধ্যেও ভীতি আছে৷একাধিক স্থানীয় আন্দোলনকারী ও সমন্বয়কের মাধ্যমে জানতে পারি,তারা সমন্বয়ক তো নয়ই,বরং রেগুলার আন্দোলনকারীও ছিল না।তাদের চেনে-এলাকার এমন সমবয়সীরা তা নিশ্চিত করেছে৷ তারা স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাং "বুলেট গ্যাং" এর সদস্য।তাদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটলেও নামের সামনে বুলেট ট্যাগ দেখা যায়।পাশাপাশি ৫ তারিখের আগে ও পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের উৎপাত ও সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়।এখন প্রশ্ন হলো কেউ যদি আন্দোলনকারী বা সমন্বয়কের নাম ভাঙিয়ে কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত হন,তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে কি না।উত্তর হলো অবশ্যই আনতে হবে ৷পাশাপাশি বিভিন্ন গুজবে বা তদবিরে কোনো অন্যায়কারী যেন ছাড়া না পায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐ ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং একজনকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিভিন্ন মামলায় এ পর্যন্ত নোয়াখালীতে ৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷এবার পুলিশের বিষয়ে বলি৷ অপরাধীদের আপনারা আইনের আওতায় আনবেন অবশ্যই।তবে যে পুলিশ সদস্যরা নিজে অন্যায়ভাবে জুলাই হত্যাযজ্ঞে জড়িত ছিলেন,তাদেরও দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যারা ২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন তারা বিপ্লবী সেনা,অভ্যুত্থানের নায়ক।তাদের গ্রেফতার করার আগে সারজিস,হাসনাত,নাহিদ,আসিফসহ বাকিদেরও গ্রেফতার করতে হবে।আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের কোনো হয়রানি করা যাবে না।অন্য অপরাধ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।এখনো বিভিন্ন থানায় কিছু পুলিশ সদস্যের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।মিথ্যা মামলায় চাপ প্রয়োগের কথা শোনা যাচ্ছে।এত রক্তপাত আর জীবনের বিনিময়ের পরও যে কালপ্রিটরা এখনো ঘুষ খায়, তারা শহিদের রক্তকে কলঙ্কিত করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।পুলিশের ওপর দেশের জনগণ আস্থা রাখতে চায়।তবে সেই আস্থা নিজেদের কাজের মাধ্যমে পুলিশকেই ফিরিয়ে আনতে হবে।বিগত বছরগুলোতে পেশাদারত্ব ভুলে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্যের দলের হয়ে তোষামোদকারী হিসেবে কাজ করার পরিণতি কী হতে পারে,কিংবা তা বাংলাদেশ পুলিশ নামক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাবোধ কোথায় নিয়ে গিয়েছে,সেটি স্পষ্ট দৃশ্যমান।আশা করি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের পরিচয় দেবে এবং প্রত্যাশিত গৌরব ফিরিয়ে আনবে৷।