ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আমের তথ্য

রংপুর, বিখ্যাত, হাড়ি,ভাঙ্গা, আম, তথ্য
  • আপলোড তারিখঃ 24-05-2024 ইং
রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আমের তথ্য ছবির ক্যাপশন: রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আমের তথ্য

মোঃ মানিক ভ্রাম্যমানকরেসপন্ডেন্ট। 


রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম একটি সুস্বাদু ও আশ বিহীন আম হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।বলা হচ্ছে এটি (হাড়িভাঙ্গা আম) বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত ও সুস্বাদু আম।২০২৪ ইং সালের ফেব্রুয়ারিতে GI পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় হাড়িভাঙ্গা আম।হাড়িভাঙ্গা আম এর জন্মস্থান রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানী নামক স্থানে।


আমটির ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয় নফল উদ্দিন পাইকার-এর মাধ্যমে।তৎকালীন জমিদার তাজ বাহাদুর সিং ছিলেন একজন সৌখিন প্রকৃতির মানুষ।তার বাগানবাড়িতে ছিল নানান প্রজাতির বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু ফলের গাছ।একই এলাকার নফল উদ্দিন ব্যাপারী ঐ জমিদার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন।সেই সুবাদে নফল উদ্দিন ঐ জমিদারের প্রায় সব গাছের আমের স্বাদ জানতেন।১৯৮৮ ইং সালের বন্যা ও যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙনে জমিদারের বাগানবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।


বিলীন হওয়ার পুর্বে ওই ব্যাপারী জমিদারের বাগান থেকে  একটি আম গাছের চারা এনে টবের আদলে একটি হাড়িতে চারাগাছটি রোপণ করেন।কিন্তু কয়েকদিন পরেই কে বা কারা হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে।তবে হাড়ি ভেঙ্গে গেলেও গাছটি অক্ষত ছিল।এই ঘটনার প্রায় ৩ বছর পরে গাছটিতে বিপুল পরিমাণে ফল আসা শুরু করে।আমগুলো ছিল খুবই সুস্বাদু।সেগুলো বিক্রির জন্য স্থানীয় বাজারে নিয়ে গেলে লোকজন ওই আম সম্পর্কে জানতে চায়।তখন চাষি নফল উদ্দিন মানুষকে বলেন "যে গাছের নিচের হাড়িটা মানুষ ভাঙ্গছিল সেই গাছেরই আম এগুলা।"তখন থেকেই ওই গাছটির আম "হাড়িভাঙ্গা আম "নামে পরিচিতি পায়।বর্তমানে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের মাতৃ গাছটির বয়স ৬৩ বছর।


বিশ্বখ্যাত স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় বাংলাদেশের আশ বিহীন হাড়িভাঙ্গা আম গাছ লক্ষ্যণীয় ও আকর্ষণীয়। ডগা পূষ্ট ও বলিষ্ঠ।ডালে জোড়কলম লাগালে গাছ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চারা রোপনের পরবর্তী বছরেই মুকুল আসে। হাড়িভাঙ্গা আম গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গাছের ডালপালা উর্ধ্বমূখী বা আকাশচুম্বী হওয়ার চেয়ে পাশে বেশি বিস্তৃত হয়। উচ্চতা কম হওয়ায় ঝড়-বাতাসে গাছ উপড়ে পড়েনা এবং আম কম ঝরে।


পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ আমের উপরিভাগ বেশি মোটা ও চওড়া,নিচের অংশ চিকন ।দেখতে সুঠাম ও মাংসালো,শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা।শ্বাস অনেক ছোট, আঁশ নেই।আকারের তুলনায় ওজনে বেশি, গড়ে ৩টি আমে ১ কেজি হয়। কোন ক্ষেত্রে একটি আম ৫০০/৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে।চামড়া কুচকে যায় তবুও পঁচে না । ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায়। তবে বেশি পাকলে ভালো লাগে না। 


ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি আম থেকে চাটনি,আচার,আমসত্ত্ব,মোরব্বা,জ্যাম,জেলি ও জুস তৈরি হয়।প্রচুর ভিটামিন "এ" বা ক্যারোটিন,ভিটামিন "সি", খনিজ পদার্থ ও ক্যালোরি রয়েছে।বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক প্রাপ্ত রংপুরের বিখ্যাত কৃষি উদ্দোক্তা আব্দুস সালাম সরকার এ জাতের আম চাষে পূর্ণতা পায় হাড়িভাঙ্গা আম।তার হাত ধরেই রংপুরের রসালো এই আমের জাত দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারেও স্থান করে নিয়েছে। এখন দেশের প্রায় সব জেলাতেই হাড়ি ভাঙা আমের গাছ দেখতে পাওয়া যায়।কমবেশি অনেকের বাড়ির উঠানে শোভা পাচ্ছে এই সুস্বাদু আম গাছের।


কেউ বা বাগান লাগিয়েছে।আমের মৌসুমে রংপুরে বেশ কয়েকটি বড় বড় হাট বসে শুধুমাত্র হাড়ি ভাঙ্গা আমকে কেন্দ্র করে। আর সেই সুবাদে অসংখ্য কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা ভিড়ে হাটের আশেপাশে।অনেকের কর্ম সংস্থানের ব্যাবস্থা হয় এই সময়টাতে।প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম বিক্রি হয় এখানে।বেশির ভাগ আম দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ারে পাঠানো হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।




নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ Daily Prothom Sakal

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের নামের খসড়া তালিকা প্রকাশ