বিশেষ প্রতিবেদক,দৈনিক প্রথম সকাল।
গত ৫ ই আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) সাবেক মেয়রসহ বেশিরভাগ কাউন্সিলর।তারা অফিস করছেন না।এতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা।জানায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় জন-প্রতিনিধিদের অনেকেই এলাকায় ফিরেছিলেন।সিটি কর্পোরেশনে নিয়মিত না গেলেও কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা।বাড়িতে অবস্থান করেই নাগরিক সেবা দেওয়া শুরু করেছিলেন।কিন্তু একের পর এক মামলা হওয়ার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন জন-প্রতিনিধিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে নগরীর ৩৮ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৬ জনই হয়েছেন মামলার আসামী।তাদের বিরুদ্ধে হামলা-ভাংচুর,অগ্নি সংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলাগুলোতে।যারা আসামী হননি তারাও এখন আর কার্যালয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।এতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লাখো মানুষ।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে ২০২৩ ইং সালের ১২ ই জুন সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের।বরিশাল সিটির ৫ম নগর পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।গত ১২ ই জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হলেও আবুল খায়ের দায়িত্ব নিয়ে মেয়রের আসনে বসেন গত বছরের ১৪ ই নভেম্বর।সে হিসেবে মাত্র ৯ মাস ৫ দিন আবুল খায়ের মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও গত ৫ ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের দিন থেকে বরিশালে নেই। নগর ভবনেও যাননি তিনি।
নির্বাচনে নগরীর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের বেশীরভাগ ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা জয় পান।সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যেও বেশীরভাগ ওয়ার্ডে জয় পান মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীরা।তবে ৫ ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশিরভাগ কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে যান।একজন কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ভাংচুর করা হয় কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে কাউন্সিলররা আত্মগোপন থেকে ফিরতে শুরু করেন।তবে অর্ধেকের বেশি কাউন্সিলর নিজ এলাকা ও কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন না।এরমধ্যে গত ২২ শে আগস্ট রাতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৩ জন প্যানেল মেয়রসহ মোট ১৫ জন সিটি কাউন্সিলরকে আসামী করা হয়েছে।
এরপর থেকে কাউন্সিলররা আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।এছাড়া ৫ই আগস্ট বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহরবাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।ঐ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুসহ তিনজন নিহত হন।সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী,ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ,সংশোধন,নাগরিকত্ব সনদ,চারিত্রিক সনদ,উত্তরাধিকার সনদ,ভূমিহীন সনদ দেওয়া হয়।এগুলো পেতে প্রতিটি সনদে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সই প্রয়োজন।তবে কাউন্সিলররা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা সেবা পাচ্ছেন না। কয়েকটি ওয়ার্ডে সচিবরা আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলরদের কাছে গিয়ে সই নিয়ে আসছেন।
তবে এতে স্বাভাবিকের চেয়ে সময় লাগছে বেশি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর বলেন "এখন সময় ভালো না।কখন কী হয়ে যায় সেই ভয়ে আছি।অনেকের কার্যালয়ে হামলা হয়েছে।কারও কারও বাড়িতেও হামলা করা হয়েছে।এই পরিস্থিতিতে কার্যালয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।তার উপর মামলার ভয়তো রয়েছেই।তাই আত্মগোপনে থেকে নাগরিক সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান করার চেষ্টা করছি।
এদিকে নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া খালপাড়,জিয়ানগর,গোরস্থান রোড,কলেজ রোড,নিউ সার্কুলার রোড,মনসুর কোয়ার্টার,কালুশাহ সড়ক,মেডিকেলের পেছনে,রূপাতলী হাউজিং এলাকার একাধিক বাসিন্দা মশার উপদ্রব বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন ৫ ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর মশকনিধনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না।কাউন্সিলরদেরও পাওয়া যায় না।যদিও নগর ভবন সূত্র দাবি করেছে নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখার জন্য সম্ভব সবটুকু কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।