বিশেষ প্রতিবেদক,দৈনিক প্রথম সকাল।
টানা উত্তেজনা শেষে ডিমের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।খুচরা বাজারে ডিমের ডজন টানা কয়েকদিন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।সবজির আমদানি বাড়লে বাজার পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে,এমনটাই মনে করছেন ডিমের পাইকারি আড়ত মালিকরা।সেইসাথে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি হওয়ায় এখন আর মোবাইলে এসএমএসে দাম চালাচালি করছে না কোম্পানিগুলো।
আজ শুক্রবার ১৮ ই অক্টোবর সকালে রাজধানীর তেজগাঁও ডিমের আড়ত মালিকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় বাজারে ডিমের দামে স্বস্তি ফিরেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।ঢাকার ডিম বিক্রির অন্যতম বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে তেজগাঁও আড়ত।দেশের বিভিন্ন স্থানের খামার থেকে ট্রাকে করে এখানে ডিম আসে।এরপর তেজগাঁও থেকে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ডিম সরবরাহ হয়।ফলে তেজগাঁওয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখলে সাধারণত খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে।
তেজগাঁওয়ে পাইকারি ডিমের আড়তদার ইসলামপুর পোলট্রি মালিক মেহেদী হাসান।সারারাত ডিম বিক্রি করার পর সকালে হিসাব নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি।তিনি বলেন প্যারাগন ও কাজী ফার্মের মত বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো মোবাইল ফোনে এসএমএস চালাচালি করে ডিমের দাম নির্ধারণ করতো।ফলে তাদের খেয়ালখুশি মত দাম উঠানামা করতো।মেহেদী হাসানের চোখেমুখে এখন স্বস্তি।তিনি বলেন সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর গত ২দিন ধরে ডিমের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।২দিন ধরে মোবাইল এসএমএসে আর দাম নির্ধারণ হচ্ছে না।
আগস্ট মাসে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল ও উত্তর অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় বাজারে কাঁচা বাজারে বেশ প্রভাব পড়েছে।সেইসাথে এইসব অঞ্চলে মাছের ঘেরগুলো ডুবে যাওয়ায় মাছ বাজারেও অস্থিরতা চলছে।কাঁচাবাজার ও মাছ বাজারে ডিমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দামও লাগামহীন ও উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যায়।তবে এখন তা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।ব্যবসায়ীদের ধারণা আগামী মাস থেকে বাজারে সবজির আমদানি বেড়ে গেলে ডিমের দামও মানুষের নাগালে চলে আসবে।
ইসলামপুর পোলট্রি মালিক মেহেদী হাসানের দাবি আগামী মাস থেকে বাজারে ডিমের দাম আরও কমে যাবে।কারণ শীতের সবজি আগামী মাস থেকে বাজারে আসতে শুরু করবে।সবজির দাম বেশি থাকায় ডিমের চাহিদা বেড়েছে।আগে আমার দোকান থেকে দৈনিক ৫০ হাজার ডিম বিক্রি হতো, এখন দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ হাজার ডিম বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আল্লাহর দান ডিমের আড়তের ম্যানেজার আল আমীন হোসেন বলেন এখন সরকার নির্ধারিত দামে করপোরেট কোম্পানিগুলো ডিম দেওয়ায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি আসতে শুরু করেছে।বাজারে আজকে প্রতিটি ১১ টাকা দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। ডজন ১৩৩ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো যদি সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করে তাহলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
পাইকারি আড়তে ডিমের ডজন ১৩৩ টাকা বিক্রি হলেও রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লার দোকানগুলোতে ১৫০ টাকা করে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে।বনশ্রী এলাকার মেরাদিয়া বাজারে জব্বার স্টোরে সকালে দেখা যায় লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।তেজগাঁও পাইকারি বাজারে ডজন ১৩৩ টাকা হলে আপনার কিভাবে ১৫০ টাকা বিক্রি করেন জবাবে জব্বার স্টোরের মালিক রফিক জব্বার বলেন তেজগাঁও পাইকারি বাজার থেকে আমাদের সরাসরি ডিম আনা হয় না।আড়তের পরে আরও ৩ থেকে ৪ হাত হয়ে আমাদের এখানে ডিম আসে। ফলে আমাদের বেশি দামে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে।
টিসিবির তথ্য থেকে জানা যায় গত ৮ ই আগস্ট ডিমের দাম ছিল,ডজন প্রতি ১৫০ থেকে ১৬২ টাকা। ২০২২ ইং সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ডিমের দাম বাড়তে থাকে ধাপে ধাপে বেড়ে তা ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।কখনো কখনো দাম ওঠে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।২০২২ ইং সালের আগে বছর জুড়ে ডজন প্রতি ডিমের দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকায় ওঠানামা করত।দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি।আগে দিনে সাড়ে ৪/৫ কোটির মতো ডিম উৎপাদন হতো।
ডিমের লাগামহীন দামে বেসামাল বাজারকে সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ ই অক্টোবর সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়।এরপর বাজারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।