ফারুক আহমেদ সূর্য,
জেলা করেসপন্ডেন্ট,লালমনিরহা।
লালমনিরহাটে নজরুলের কথা, একজন শ্রদ্ধেয় বাঙালি কবি, লেখক এবং সঙ্গীতজ্ঞ,যিনি তাঁর বিপ্লবী এবং অনুপ্রেরণামূলক কাজের জন্য পরিচিত।নজরুল নিয়ে কবিতা,গানে,আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে।১২৫ তম নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় জেলা পরিষদ(পুরাতন) মিলনায়তনে নজরুল উদযাপন পর্ষদ ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসক লালমনিরহাট মোহাম্মদ উল্যাহ'র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন লালমনিরহাট-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড মতিয়ার রহমান।এসময় কাজী নজরুলের জীবন কাহিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে মঞ্চ থেকে পাঠ করে শোনান লেখক, সংগঠক ও কবি,কথা-সাহিত্যিক এবং নজরুল উদযাপন পর্ষদের সভাপতি ফেরদৌসী বেগম বিউটি। তিনি বলেন বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মদিন আজ।
কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসাবে সেটা ছিল ১৮৯৯ ইং সালের ২৪ মে।বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ,মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া।অভাবী পরিবারে বেড়ে ওঠা এ প্রতিভা জীবিকার তাগিদে সম্পৃক্ত হয়েছেন নানা পেশায়। লেটো দলের বাদক,রেল গার্ডের খানসামা,রুটির দোকানের শ্রমিক-নানারকম পেশা বেছে নিয়েছিলেন শৈশব ও কৈশোরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছেন।শাসকের কোপানলে পড়েছেন,কারারুদ্ধ হয়েছেন। করেছেন সাংবাদিকতাও।এই সময়গুলোতেই কালি ও কলমে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছেন তিনি।বাংলা কবিতায় নজরুলের আর্বিভাব একেবারেই উল্কার মতো।বাংলা সাহিত্যে আর্বিভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনও গবেষণা হচ্ছে দেশ-বিদেশে।
সংগীত বিশিষ্টজনদের মতে রবীন্দ্র পরবর্তী নজরুলের গান অনেকটাই ভিন্ন ধরনের নির্মাণ। অধিকাংশ গান সুরপ্রধান। বৈচিত্রপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়।বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি,সংগীতজ্ঞ,ঔপন্যাসিক,গল্পকার,নাট্যকার,প্রাবন্ধিক,সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার,গায়ক ও অভিনেতা।তার কবিতা,গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।তিনি ছিলেন অ-সাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক।তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ ইং সালের ২৪ শে মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবিকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন।১৯৭৬ ইং সালের ২৯ আগস্টে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার লালমনিরহাট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম,সমাজসেবার উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান, নেসকোর নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার রায়,জেলা কালচারাল অফিসার আসাদুজ্জামান সরকার, নজরুল উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জেমস্ আশীষ দাস,সেবা ক্লিনিকের এমডি শাহা আলম রানাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শিল্পী কলাকৌশলীবৃন্দগণ।