সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,দৈনিক প্রথম সকাল।
জননেত্রী,বঙ্গকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন আমি বিশ্বাস করি যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত তাদের সাথে এই সকল সন্ত্রাসীদের কোনও সম্পর্ক নেই।বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।যারা হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছে তাদের পরিবারের জন্য জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা দরকার তা আমি করব।আজ বুধবার ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা তিনি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি যারা হত্যাকান্ড,লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে এরা যেই হোক না কেন,তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আমি আরও ঘোষণা করছি,হত্যাকান্ডসহ যে সকল অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে,সুষ্ঠ বিচারের ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে সে সকল বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।কাদের উস্কানিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো কারা কোন উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল,তা তদন্ত করে বের করা হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন আমি আন্দোলনরত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।এই সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময়ে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে।তাই শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা,অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আমার আবেদন,তারা যেন তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকেন।একই সাথে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে।আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।আদালত শিক্ষার্থীদের কোন বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।এই আইন প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতিকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না।সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্র সমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচারই পাবে,তারা হতাশ হবে না।শেখ হাসিনা বলেন ২০১৮ ইং সালে ছাত্র সমাজের আন্দোলনে পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরকারি চাকুরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটা পরিপত্র জারি করে।পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ ইং সালের জারি করা সরকারের পরিপত্র বাতিল করে দেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয় এবং মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করে।এ সময় আবার ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবী নিয়ে আন্দোলন শুরু করে।এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে।বরং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করে।মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী বলেন অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে অনাকাঙ্খিত উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়।এর ফলে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যে সকল ঘটনা ঘটেছে তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক।অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল।আপনজন হারাবার বেদনা যে কত কষ্টের তা আমার থেকে আর কে বেশি জানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যারা মুত্যুবরণ করছে তাদের আত্মার মাগফিরাত কমনা করছি।পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।আমি প্রতিটিহত্যাকান্ডের নিন্দা জানাই।যে সকল ঘটনা ঘটেছে তা কখনই কাম্য ছিল না।চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।অনেক ছাত্রদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়।তাদের উপর লাঠিপেটা এবং ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে,একজন মৃত্যুবরণ করেছে,অনেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
ঢাকা,রংপুর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।সাধারণ পথচারী,দোকানীদের আক্রমণ,এমনকি রোগীবাহী এম্বুলেন্স চলাচলে বাধা প্রদান করা হয়।মেয়েদের হলে ছাত্রীদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।আবাসিক হলে প্রভোস্টদের হুমকি দেওয়া হয় এবং আক্রমণ করা হয়েছে।শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।