ঢাকা | বঙ্গাব্দ

২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বন্ধু কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সন্তান বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল

ড. রাধা বিনোদ পাল ছিলেন শিক্ষাবিদ আইনজ্ঞ,পন্ডিত।দারিদ্র্য পরিবারে ডক্টর রাধা
  • আপলোড তারিখঃ 08-10-2024 ইং
২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বন্ধু কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সন্তান বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল ছবির ক্যাপশন: ২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বন্ধু কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সন্তান বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল
মাহাফুজ আনাম সিনহা,রিপোর্টার,মিরপুর,কুষ্টিয়া। 

ড. রাধা বিনোদ পাল ছিলেন শিক্ষাবিদ আইনজ্ঞ,পন্ডিত।দারিদ্র্য পরিবারে ডক্টর রাধা বিনোদ পাল জন্মগ্রহণ করলেও অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন,কোন কথা শোনা মাত্র তিনার মুখস্থ হয়ে যেত।বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল এর শিক্ষা জীবনের ছোট্ট ইতিহাস পাওয়া যায় তিনার জীবনি থেকে, রাধা বিনোদ এর বাবা ছোটবেলায় ইহলোক ত্যাগ করেন,দারিদ্র্য পরিবারের সন্তান হওয়ার কারনে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে পারেন নি, তিনি ছোট বেলায় অন্যের বাড়িতে রাখাল হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

তিনি গরু গুলো মাঠে চরানোর সময় যখন রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতেন তখন দেখতে পেতেন অনেক ছেলে মেয়ে এলাকার বিদ্যাপীঠে লেখা পড়া শিখছে, এতে ডক্টর রাধা বিনোদ পাল এর মনে শিক্ষা অর্জন এর জন্য তীব্র আকাঙ্খা তৈরি হয়,কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও তা সম্ভব হয়ে উঠে না সেসময়ে, কেননা সে দারিদ্র্য পাল সম্পদায়ের পিতা হারা অনাথ শিশু।

এভাবে কিছু দিনের মধ্যে রাধা বিনোদ পাল এর মনে শিক্ষা অর্জন মানসিকতা বাড়তে থাকল,তিনি গরু চড়াতে মাঠে এসে গরুগুলো খোলা ময়দানে রেখে, এলাকার বিদ্যালয়ের একপাশে দাড়িয়ে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শুনতেন এবং মুখ মিলিয়ে মনে মনে মুখস্থ করে ফেলতেন।একদিন হঠাৎ ওই বিদ্যাপিটের মাস্টার সকল ছাত্র ছাত্রীদের জিঙ্গেস করলেন আচ্ছা আমি গতকাল তোমাদের যা পড়িয়েছি সেগুলো কার কার মুখস্থ হয়েছে? মাস্টার এর প্রশ্নে কেউই উত্তর দিতে পারলেন না,বিদ্যালয়ের বাহির থেকে রাধা বিনোদ পাল বললেন মাষ্টার মশাই আমার মুখস্থ হয়ে গেছে আমি কি বলব?

 মাস্টার মশাই বাহিরে এসে দেখলেন গ্রামের রাখাল বালক রাধা বিনোদ পাল। রাধা বিনোদ কে মাষ্টার মশাই বললেন বাবা তুমি তো কখনো ক্লাস করোনি তুমি কীভাবে পড়া মুখস্থ করলে? রাধা বিনোদ বললেন আমি এই দেয়ালের আড়াল থেকে সব শুনে মুখস্থ করে ফেলেছি।মাস্টার মশাই বললেন তাহলে বল তো, রাধা বিনোদ পাল এর মুখস্থ সব পড়া বলে দিলেন,এই প্রতিভা দেখে মাষ্টার মশাই আবেগাপ্লুত হলেন এবং বললেন রাধা বিনোদ তুমি কাল থেকে বিদ্যালয়ে আসবে, তোমাকে কোন ফী দেওয়া লাগবে না। 

এভাবেই শুরু হলো ডক্টর রাধা বিনোদ পাল এর শিক্ষা জীবনের সূচনা।এরপর তিনি বিভিন্ন জনের বাড়িতে থেকে শিক্ষা চালিয়ে নিতে থাকেন।এরপর তিনি ভারত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও আইনবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, যখন জাপানের হিরোশিমায় নিজেদের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়, আমেরিকা তখন জাপান কে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়,এককথায় এক ঘরি। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের সহয়তায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিচার এর জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়।এতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা সদরপুর ইউনিয়ন এর কৃতি সন্তান বিচারপতি ডক্টর রাধা বিনোদ পাল।

তিনি এমন সুক্ষ বিচার বিশ্লেষণ করে জাপান কে আপরাধি মুক্ত ঘোষণা করেন, যা ছিল ইতিহাসের যুগান্তকারী পদক্ষেপ, এতে স্বয়ং আমেরিকাও নিজের ভুল স্বীকার করে জাপানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির আশা করেন। জাপান সরকার পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে ডক্টর রাধা বিনোদ পাল কে জাপানের স্থায়ী নাগরিকত্ব প্রদান করেন। জাপানের রাজধানী টোকিওতে বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল এর নামে সড়ক,জাদুঘর, ও স্টাচ্যু রয়েছে। জাপানে ডক্টর রাধা বিনোদ পাল এর নাম শ্রদধার সাথে স্মরণ করা হয়। 

পরবর্তী সময়ে ডক্টর রাধা বিনোদ পাল এর নামানুসারে কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার আমলা সদরপুর ইউনিয়ন এর কাকিলাদহে জাপান সরকার বিশাল হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু তৎকালীন সন্ত্রাস কবলিত এলাকার জন্য এই হাসপাতাল এর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় পরে আছে বিখ্যাত আইনজ্ঞ ও বিচারপতি ডক্টর রাধা বিনোদ পাল এর বসতভিটা।১৯৬৭ ইং সালের ১০ ই জানুয়ারি জাপানে ডক্টর রাধা বিনোদ পাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ Daily Prothom Sakal

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের নামের খসড়া তালিকা প্রকাশ