নিজস্ব প্রতিবেদক,দৈনিক প্রথম সকাল।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা খোলা রয়েছে।অদ্য বৃহস্পতিবার ১১ ই জুলাই দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলার লিভ টু আপিলের শুনানিতে তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে এমন মন্তব্য করেন।এ সময় দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। রুহুল কুদ্দুস কাজল সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ও বর্তমানে বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য।
পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন প্রাসঙ্গিকক্রমে প্রধান বিচারপতি যেটা বলেছেন যে দেখেন নির্বাহী বিভাগের যেকোনো আদেশ চ্যালেঞ্জ করার জন্য বিচার বিভাগের কাছে আসে।তখন আমি বলেছি যে, এ আদালতের যেসব ভূমিকা আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যে সরকারি যেকোনো পদক্ষেপ যদি আমরা মনে করি ন্যায় সংগত নয়,তখন সেটাকে চ্যালেঞ্জ করি। তখন প্রধান বিচারপতি আমাকে উদ্দেশে করে বলেছেন আপনি তো বারের নেতা,রাজনৈতিক কর্মী,আপনি পেশাজীবীদের নেতা হিসেবে আপনারও দায়িত্ব আছে,যারা আন্দোলন করছেন তাদের বোঝানোর জন্য এটা আল্টিমেটলি আদালতের সামনে এবং আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।এটি উনি মূলত বোঝাতে চেয়েছেন।
খুরশীদ আলম খান বলেন প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেছেন-যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন তারা আদালতে আসুক।তারা আদালতে এসে তাদের কথাগুলো বলুক।আদালতের দরজা সবার জন্য খোলা।তারা তাদের অভিযোগগুলো বলুক।তারা শুধু বলছে নির্বাহী বিভাগকে।নির্বাহী বিভাগ যদি কোনো আদেশ দেয়,সেটা আবারও আদালতে আসবে।সেজন্য প্রধান বিচারপতি গুরুত্ব দিয়েছেন আদালতের দরজা সবার জন্য খোলা।যে কেউ এখানে আসতে পারে।এর আগে গত ১০ ই জুলাইও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি।
গতকাল বুধবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।আগামী ৭ ই আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে।গতকালের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন সব প্রতিবাদী কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে।দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবেন বলে এ আদালত আশাকরে।
আদালত আরও বলেন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলেও আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য এ আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল আবেদন নিষ্পত্তির সময় তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন।এরপর আদালত রায়ের উপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেন। একইসঙ্গে আগামী ৭ আগস্ট শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হয়।প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন ২০১৮ ইং সাল থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা ছাড়াই নিয়োগ হয়ে আসছে।বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে,মৌখিক পরীক্ষা হবে।অপরদিকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছে।এখন লিখিত পরীক্ষার অপেক্ষা।হাইকোর্ট থেকে কোটা নিয়ে একটি রায় এসেছে। এ রায়ে পরিপত্র বাতিল করা হয়েছে। নিয়োগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আপনারা আমাদের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল করতে বলেছেন। কিন্তু রায় এখনও স্বাক্ষর হয়নি।তাই আমরা হাইকোর্টের রায় স্থগিত চাচ্ছি।
এরপর শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন আমরা ২জন ছাত্রের পক্ষে আবেদন করেছি।যদিও এ ২জনের সাথে আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই।তদুপরি শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা নিজেদের মতামত জানাতে চেম্বার জজে আবেদন করেছিলাম।চেম্বার আদালত আজ শুনানির জন্য রেখেছেন।আমরা চাচ্ছি চূড়ান্ত শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এ রায়টা স্থগিত থাকুক।এরপর রিটকারীদের আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন আমরা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইনি।আমরা শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার জন্য বলেছি।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ ইং সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেন।১৯৭৫ইং সালের পর ২১ বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রয়োগ হয়নি।এরপর ১৯৯৭ ইং সাল থেকে ৪ বছর এ কোটা প্রয়োগ হয়।এরপর ২০১৮ ইং সালে নাতি-নাতনির জন্য কোটা প্রয়োগের বিধান হলেও তা প্রয়োগ হয়নি।
তিনি বলেন বলা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধারা মেধাহীন।অথচ কোটায় চাকরি পেতে হলেও তাকে সব পরীক্ষায় সমভাবে প্রতিযোগিতা করেই পাস করে আসতে হয়।তখন প্রধান বিচারপতি বলেন রায়টা যেহেতু আমাদের সামনে নেই,তাই সেখানে কী আছে আমরা কেউ বলতে পারছি না।এ রায় নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছে।এখন তারা আদালতে এসেছে এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কিছু করতে হলে এটা এখান থেকেই করতে হবে।আমরা এটা বহাল, বাতিল বা সংশোধন করতে পারি। আমরা সরকারকেও আদেশ দিতে পারি।এরপর কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেন সর্বোচ্চ আদালত।এ আদেশের ফলে আপাতত কোটা বাতিল করে দেওয়া পরিপত্র বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ২ শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
তিনি বলেন হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা থাকছে।এর ফলে নিয়োগ পদ্ধতিতে আপাতত কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ হবে না।২০১৮ ইং সালের পর যেভাবে নিয়োগ হয়ে আসছিল, সেই পদ্ধতিই বহাল থাকবে।অপর দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আমি বলব আপনাদের আর আন্দোলন করার যৌক্তিক কারণ নেই।যেহেতু আদালত একটি অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন।আপনারা সবাই রাস্তা ছেড়ে দেন। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবেন না,জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে মানুষের সমস্যা হয়।মানুষের সমস্যা হলে রাষ্ট্রকে দেখতে হয়।এ কথাগুলো বিবেচনা করে অবশ্যই আপনারা আপনাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করুন।
এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান চেম্বার কোর্টের অনুমতি নিয়ে একটি সিএমপি (হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে) আবেদন করেন।ঐ দিনই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সেই আবেনের শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত।মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ ই জুন কোটা পুনর্বহাল করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্টবেঞ্চ রায় দেন।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ রায়টি স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন।আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত গত ৯ ই জুন আবেদনটি শুনানির জন্য ৪ জুলাই নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।গত ৪ জুলাই হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়নি।তবে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়েছে।হাইকোর্টের রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের উপর ৪ ঠা জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ "নট টু ডে"(আজ শুনানি নয়) আদেশ দেন।রিট আবেদনকারী পক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ ইং সালে সরকার পরিপত্র জারি করে।২০১৮ ইং সালের ৪ ঠা অক্টোবর জারি করা এমন পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ ইং সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ই ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন।ঐ রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ ই জুন রায় দেন হাইকোর্ট।এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।