স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,দৈনিক প্রথম সকাল।
অগ্নিকন্যা খ্যাত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ,আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।আজ বুধবার ১৬ ই অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতিয়া চৌধুরীর মামা সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার।
১৯৪২ ইং সালের ৩০ শে জুন পিরোজপুর জেলায় মতিয়া চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী।১৯৬৪ ইং সালের ১৮ ই জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মতিয়া চৌধুরী।ইডেন কলেজের ছাত্রী থাকাকালীন তিনি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত হন।১৯৬২ইং সালে হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে যে প্রবল ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে,তারও সম্মুখসারির সংগঠক ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ১৯৬৩ ইং সালে তিনি রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।এর পরের বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৬৫ ইং সালে ছাত্র ইউনিয়ন মতাদর্শিক কারণে বিভক্ত হলে মতিয়া চৌধুরী এক অংশের সভাপতি নির্বাচিত হন।অন্য অংশের সভাপতি হয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন।সেই হিসাবে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ ও ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপ নামে পরিচিতি পেয়েছিল।
মতিয়া চৌধুরী তার জ্বালাময়ী বক্তৃতার কারণে "অগ্নিকন্যা" হিসাবে ছাত্র-জনতার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন।ছাত্র জীবন শেষ হওয়ার পর ১৯৬৭ ইং সালেই মতিয়া চৌধুরী যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে।দ্রুতই রাজনৈতিক মহলে ব্যাপকভাবে খ্যাতি অর্জন করেন তার বক্তৃতার কারণে।১৯৬৯ ইং সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আইয়ুব খানের পতন হলে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাজনৈতিক বন্দি কারাগার থেকে মুক্তি পান।মতিয়া চৌধুরীও তখন জেল থেকে বেরিয়ে এসে মাঠের রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালির জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।মতিয়া চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি ন্যাপের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুন-র্গঠনের রাজনীতি করেন।বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি-গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্ম-নিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ-এই ধারার রাজনীতি থেকে মতিয়া চৌধুরী কখনো বিচ্যুত হননি।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বামপন্থি রাজনীতিবিদদের ভালো সম্পর্ক ছিল।সেই ধারাবাহিকতায় মতিয়া চৌধুরীও ছিলেন তার পছন্দের তালিকায়।১৯৭৫ ইং সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল গঠন করলে এর ১১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মতিয়া চৌধুরীকেও রাখা হয়।