বিশেষ প্রতিনিধি,দৈনিক প্রথম সকাল।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ ইং সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবী ও পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন আছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।আজ শনিবার ৬ ই জুলাই রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মির্জা ফখরুল।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞান ভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধা ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিগুলোর সাথে আমরা একমত।
মির্জা ফখরুল বলেন অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দেশের সব কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার জন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করে সরকারি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীরা প্রতিবাদ করছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।এটা জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।সর্বজনীন পেনশন স্কিম নামে নতুন স্কিম চালু করা সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামত করার একটা কৌশল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন অবৈধ ও আর্থিকভাবে দেওলিয়া সরকারের আরেকটি নতুন লুটপাট স্কিম যার নাম প্রত্যয় স্কিম।এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমাজের যে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই যৌক্তিক ও সমর্থন যোগ্য।
সাংবিধানিকভাবে ও আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসাবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।১ম,২য়,৩য় তথা কোনো শ্রেণিতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না।২০১৮ ইং সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল বাংলাদেশে।তার মাঝে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা।বাকি কোটার মধ্যে ১০ শতাংশ নারী কোটা,১০ শতাংশ জেলা কোটা,৫ শতাংশ কোটা ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।ঐ বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করে।শিক্ষার্থীদের দাবী ছিল যে কোটা ৫৬ শতাংশ না হয়ে ১০ শতাংশ করা হোক।তাদের দাবীর মুখে সে বছর পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।কিন্তু ২০২১ ইং সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাবার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন এবং চলতি বছরের ৫ই জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট।এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি করেনি আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত না করায় পূর্বের নিয়মানুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল রয়েছে।হাইকোর্টের রায়ের পর গত ৬ ই জুন থেকেই তা বাতিলের দাবীতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।মাঝে কিছুদিন আন্দোলন চললেও ঈদুল আজহার কারণে ২৯ শে জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন শিক্ষার্থীরা।পরদিন ৩০ শে জুন থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা।